তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম :: সত্যজিৎ রায়ের স্বল্প আলোচিত অসাধারণ এক কাজ!


সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা আর শঙ্কুর ভিড়ে অতি অসাধারণ এক কাজকে ইদানিং কেউ খুব একটা স্মরণ করে না। এবং তার অন্য লেখায় হিউমারের বেশ স্বল্পতা যেখানে লক্ষ করা যায়, সেখানে এই বইটিতে সেটা যে পরিমানে আছে তা একাই যেন সে খামতিকে পূরণ করে দেয়।
বাংলায় অর্থ-অপ্রধান সাহিত্য বা ননসেন্স ধারাকে জনপ্রিয় করেছেন সুকুমার রায়। আর তারই সুযোগ্য পুত্র সত্যজিৎ রায় পশ্চিমের অসাধারণ কিছু ননসেন্সকে অনুবাদের মত বড় একটি কাজ করে গেছেন। সত্যজিৎ তার পিতার কিছু ছড়াকে ইংরেজিতে রুপান্তর করেছেন, তেমনি ননসেন্স সাহিত্যের দিকপাল এডওয়ার্ড লিয়ার বা লুইস ক্যারলের বেশ কিছু কাজ বাংলায় পাল্টেছেন- পাল্টেছেন বলাই ভাল, কারন এসবের অনুবাদ ঠিক হয় না, মূলভাবটা নিয়ে তিনি নিজের মত করে লিখেছেন সেটা বইয়ের শুরুতে তিনিও কবুল করেছেন। লিয়র লিখেছেন অসংখ্য লিমেরিক, মানে পাঁচ বাক্যের ছড়া- সাথে এঁকেছেন ছবি। সত্যজিৎ সেই ছবিগুলো রেখে আনকোরা বাংলায় রূপান্তর করেছেন অদ্ভূত কিছু লিমেরিক। লিয়রের jumblies অবলম্বনে পাপাঙ্গুল, কিংবা ডং উইথ লুমিনাস নোজ এর যে বিস্ময়কর অনুবাদ তিনি করেছেন সেগুলো মৌলিক বলাই যৌক্তিক।লুইস ক্যারলের বিখ্যাত জবরওয়াকি সহ বেশ কয়েকটা ছড়ার অনুবাদও একই ভাবে তিনি করেছেন।
এসব পড়লে মনে হয়- সত্যজিৎ চাইলেই তার পিতার মত ছড়ার জগতকেও মাতিয়ে রাখতে পারতেন। সুকুমারের আবোল তাবোলের যে বিদায়ী করুণ বাক্যদ্বয়-
‘ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গমোর’
ঠিক তার আগের লাইনই ছিল
‘আদিম কালের চাদিম হিম,
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’
সেই আবোল তাবোলের ধারাবাহিকতাই ধরে রাখার জন্যই হয়তো সত্যজিৎ বইয়ের নামটাও সেখান থেকে নিয়েছেন- অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে।

বইটির সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশ বোধহয় ৫ পদী লিমেরিক। এই লিমেরিকের চর্চা বাংলায় খুব একটা হয়নি, অবশ্য পাঁচ বাক্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে খুব বেশি চর্চাতে হয়তো সায় মেলেনি আমাদের ছড়াকারদের।
লিয়রের যে লিমেরিকগুলো এ বইতে সত্যজিৎ অনুবাদ করেছেন, সেগুলোর মূল ইংরেজি পড়ে আমার মনে হয়েছে- অনুবাদ মূল ভার্সনের চেয়ে অধিকাংশই ভালো হয়েছে। এর মানে হয়তো এটা হতে পারে, বাংলা ভাষা লিমেরিকের জন্য আরো উপযুক্ত। হয়তো ভবিষ্যতে কোন ছড়াকার এ ব্যাপারে আরো কাজ করবেন। এ বইয়ের কয়েকটা লিমেরিক এখানে তুলে দিলাম পাঠকদের জন্য


বইটাতে লিমেরিক ছাড়াও বেশ কয়েকটা বড় বড় অনুবাদ ছড়া আছে, পড়লেই বোঝা যায় এগুলো অনুবাদের চেয়েও বেশি কিছু। নমুনা হিসেবে কয়েকটা ছড়া না দিয়ে পারছি না।
লুইস ক্যারলের একটি ছড়ার অনুবাদ-‘মেছো গান’ নামে রয়েছে বইটিতে,ছড়াটা ভীষণ প্রিয় আমার-

শীতকালেতে গাছের পাতা পড়বে যখন ঝরে
গানটা আমি গাইবো তোমার কানে
বসন্তেতে সবুজ কচি ধরলে গাছের পরে
তোমায় ডেকে বলবো গানের মানে
গ্রীষ্মকালে গায়ের মাটি উঠবে যখন তেতে
গানের মানে ঢুকবে তোমার মাথায়
শরৎকালের সোনার ফসল ফললে পরে ক্ষেতে
গানটা লিখে রাখতে পারো খাতায়।

তবে শোনো-
মাৎলার উত্তরে আছে যত মৎস্যেরা
পত্তর লিখে দিনু শুনো ওহে বৎসেরা
মৎসের বৎসেরা খৎ পাওয়া মাত্তর
উত্তর দিল মোরে সত্বর সত্বর

জবাবেতে বললে তারা অবাক করে মোরে-
তুমি যেটা বলছো সেটা করবো কেমন করে?
আমি তখন পালটা তাদের দিয়ে দিলাম জবাব-
করতে হবেই।ভেবেছ কী? তোমরা বুঝি নবাব?
এবার তারা মুচকি হেসে জানায় মোরে লিখে-
মেজাজ যদি দেখাও তবে পড়বে বেগতিকে।

এই হবে উত্তর কেউ কি তা জানতো
ধুত্তর বলে তাই করি চক্রান্ত।
কংসের পাত্তর নিয়ে যাই কলেতে
রাত্তির হলে পরে ভরি তায় জলেতে।
এমন সময় এক বুড়ো এসে বলে-
মাছেরা যে ঘুম দেয় ডাঙাতে।
আমি বলি চট করে যাও দিকি চলে
দেখো যদি পার ঘুম ভাঙাতে...


বইয়ের প্রিয় আর একটি ছড়া আদ্যি বুড়োর পদ্যি, এটা লুইস ক্যারলের হোয়াইট নাইট সং অবলম্বনে লেখা-

বলবার আছে যা বলি আজ তোরে
(বলবার বেশি কিছু নেই)
দেখেছিনু বুড়ো এক ফটকের পরে
সব্বার ত্থুথুড়ে যেই।

আমি তারে শুধোলোম, বুড়ো তুই কে রে?
দিন তোর কাটে কোন কাজে?
জবাবেতে বুড়ো কথা বলে তেড়েমেড়ে
মোর কানে কিছু ঢোকে না যে

বুড়ো বলে ধরি আমি ফড়িং এর ছানা
যেই ছানা ঘুম দেয় মাঠে
তাই দিয়ে রেধে নিয়ে মোঘলাই খানা
ফেরি করি গঞ্জের হাটে

সেই খানা খেয়ে নিয়ে খালাসির বেটা
পাড়ি দেয় সাগরের জলে
এই করে কোনমতে খেয়ে আধপেটা
কায়ক্লেশে দিন মোর চলে

বুড়ো বকে, আমি পড়ি চিন্তার ফেরে
দাড়ি যদি হয় কারো সবুজই
থুৎনির সামনে হাতপাখা নেড়ে
সেই দাড়ি ঢাকা যায় না বুঝি?

বুড়ো দেখি চেয়ে আছে কাঁচুমাচু মুখে
আমি ভাবি কী যে বলি তারে
তারপর মেরে এক কিল তার বুকে
বলি- বল আয় কিসে বাড়ে

বুড়ো বলে শোনো আমি পাহাড়ের বুকে
খুজেঁ ফিরি ঝরণার জল
সেই জল পেলে পরে চকমকি ঠুকে
চট করে জ্বালি দাবানল

....
এদিকে আমি ভাবি আর সব ছেড়ে
খাই যদি শুধু পাটিসাপটা
ওজনটা দিন দিন যাবে নাকি বেড়ে?
বাড়বে না উদরের মাপটা?
....
( পুরো টুকু দিলাম না, ছড়াটা বেশ বড়)

ছড়াগুলো পড়লে মনে হবে কোন অর্থ নেই, কিন্তু অন্য রকম এক হাস্যরস বা রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে লাইনে লাইনে। এটাই হয়তো ননসেন্স এর গুণ। ছেলেবেলায় আমরা সবাই যেমন নানা ননসেন্স রাইমে মজে থাকতাম, সেরকমই একধরনের ভালো লাগা জুড়ে থাকে পড়ার সময়।

ছড়াপ্রেমী এবং সত্যজিৎ অনুরাগীদের অবশ্যপাঠ্য একটা বই!

3 comments:

  1. বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত "শিবরামের মজার গল্প" বইটা সম্পর্কে একটা লেখা আছে না আপনার।

    ওটাও দিয়ে দিন না।

    ReplyDelete
  2. No matter how long an internet casino has been operating, it is important to|it may be very important|you will need to} look at at|have a glance at} its status. You wish to know that your cash isn't being wasted, and that you've got} a fair probability of beating the home on a couple of occasion. We are happy to say that is not a|there isn't any} Spin Casino rip-off here. This is a properly licensed and regulated casino, having earned that designation from each the 점보카지노 UK Gambling Commission and Malta Gaming Authority. There’s no downloadable app to speak of, however the website is easily accessible on cell units. Sans a number of} hundred “mBit originals”, you’ll get pleasure from a full-fledged gaming experience whereas on the go.

    ReplyDelete