পয়জনিং ১ : হারপিক টাইপ টয়লেট ক্লিনার পয়জনিং হলে কি করবেন, আর কি কি করবেন না!

আমাদের দেশে কোন ডাক্তার হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ডিউটি দিয়েছে আর ২০-৩০ টা হারপিক বা অন্যান্য টয়লেট ক্লিনার পয়জনিং পায়নি, সেটা হতে পারে না। সবার বাসায়ই এই ধরনের টয়লেট পরিস্কারক থাকে, আর পরিবারের অভিমানী কিশোর বা কিশোরীদের সেই বোতলের প্রতি মারাত্মক ঝোঁক থাকে। তারা নাক বুজে অভিমান তাড়াতে কয়েকঢোক গিলে ফেলে। তারপরই অবশ্য রণে ভঙ্গ দিতে হয়। কারন আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি, এর স্বাদ সুবিধাজনক। তাহলে জেনে নেই আপনার পরিবারের কেউ যদি এই জিনিস চেখে ফেলে তাহলে কি কি করবেন আর কি করবেন না। তারআগে কিভাবে বুঝবেন সে হারপিক টাইপ কিছু খেয়েছে-

যেভাবে বুঝবেন হারপিক পয়জনিং:

১. প্রথমত রোগীর অস্থির আচরণেই আপনি বুঝতে পারবেন কোন বিষ জাতীয় কিছু হয়তো খেয়েছে। রোগী বলবে তার গলা জ্বলে যাচ্ছে, বমি করতে পারে, অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে।
২. মুখ দিয়ে ঝাঝালো কটু গন্ধ আসবার কথা, হারপিকের গন্ধ পেলেই কনফার্ম হয়ে যাবেন
৩. রোগী অধিকাংশ সময় নিজেই বলবে কি খেয়েছে
৪. বুঝতে না পারলে বাথরুমে বা আশেপাশে দেখুন, খেলে নিশ্চয়ই কোন আলামত পাবেন, হয়তো বোতল উল্টে আছে বা মেঝেতে হারপিক পড়ে আছে।
কি করবেন:
১. শরীরের কোন স্থানে বিষ লাগলে সেটা যে বিষই হোক তা ধুয়ে ফেলতে হবে, পোষাকে লাগলে পোষাক পাল্টে দিতে হবে, চোখে লাগলে প্রচুর পানি দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে
২. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাবেন
৩. নি:শ্বাস নিচ্ছে কিনা লক্ষ রাখুন। মুখে ফেনা বা বমি জমা হলে সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিন পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে যাতে সেগুলোর কারনে শ্বাস প্রশ্বানে কোন সমস্যা না হয়। ৪. রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে বাম পাশে কাত করে শুইয়ে রাখবেন, তাতে পেট থেকে কিছু বের হয়ে ফুসফুসে যাবে না ।
৫. পানি যদি খেতে চায় অল্প করে খাওয়ান, তবে শুয়ে না, বসে খাবে, কারন শুয়ে খেলে পানি পেটে না গিয়ে ফুসফুসে চলে যেতে পারে, তখন আরো বড় সমস্যার উদ্ভব হবে। ( তবে পানি না খাওয়াই ভাল, এটা নিয়ে আসলে দ্বিমত আছে)
কি করবেন না:
১. কিছুই খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। ( অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত হলে সামান্য পানি খাওয়াতে পারেন)
২. অনেকে বমি করার জন্য রোগীকে উৎসাহ দান করে, বমি হতে পারে এমন কিছু খাওয়ানোরও চেষ্টা করে, এটা করা যাবে না, রোগী আরও খারাপ হবে।
৩. হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে পেট ওয়াশ দেন বলে বলে বারবার বিরক্ত করবেন না, এ ধরনের পয়জনিং এ পেট ওয়াশ করতে গেলে পেট ফুটো হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। অন্তত এই ব্যাপারটা মনে রাখুন।
৪. হাসপাতালে নিতে দেরি করবেন না, কারন আপনার মনে হতে পারে রোগী ভাল আছে, কিন্তু হয়তো খানিক পরেই শ্বাসনালী ফুলে গিয়ে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এর পরিণতি কি হতে পারে:
এসব টয়লেট ক্লিনার মূলত করোসিভ এজেন্ট। এটা যখন আমাদের দেহের সংস্পর্শে আসে তখন টিস্যু ড্যামেজ করে দেয়, ক্ষত তৈরি করে। হারপিক টাইপ ফ্লুইড মূলত খাদ্যনালী ও পাকস্থলীতে প্রথমে ক্ষত তৈরি করে, তারপর সেসব ক্ষত যখন সেরে উঠে তখন জায়গাগুলো সরু হয়ে যায়, তাই এই পয়জনিং এ মৃত্যু হবার চান্স কম হলেও আজীবন রোগীকে ভুগতে হতে পারে। আমার দেখা এক হারপিক পয়জনিং এর রোগী সেরে উঠার ২-৩ বছর পরও শক্ত খাবার খেতে পারতো না,তরল জাতীয় খাবার খেয়ে জীবন পার করছে। বেশি মাত্রায় গ্রহন করলে পাকস্থলী ফুটো হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে, যেটা হলে ইমার্জেন্সি সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

তথ্যসূত্র: ১. ন্যাশনাল গাইডলাইন ফর পয়জনিং ২. ডেভিডসন'স প্রিন্সিপাল এন্ড প্র্যাকটিস অব মেডিসিন ২২ এডিশন

No comments:

Post a Comment